বাংলাদেশ সেনাবাহিনী | |
---|---|
সক্রিয় | ১৯৭১ - বর্তমান[১] |
দেশ | বাংলাদেশ |
আনুগত্য | বাংলাদেশের সংবিধান |
শাখা | সেনাবাহিনী |
ধরন | স্থল যুদ্ধ |
আকার | ১,৪৮,৬১৭ জন সামরিক[২] |
অংশীদার | বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী |
সেনাবাহিনী সদর দপ্তর | ঢাকা সেনানিবাস |
পৃষ্ঠপোষক | বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি |
নীতিবাক্য | সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে |
রং | কালো, সবুজ |
কুচকাত্তয়াজ | চল চল চল |
বার্ষিকী | সশস্ত্র বাহিনী দিবস(২১ নভেম্বর |
যুদ্ধসমূহ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত উপসাগরীয় যুদ্ধ অপারেশন থান্ডারবোল্ট অপারেশন টোয়াইলাইট |
সজ্জা | ১. বীর শ্রেষ্ঠ ২. বীর উত্তম ৩. বীর বিক্রম ৪. বীর প্রতীক |
ওয়েবসাইট | www.army.mil.bd |
কমান্ডার | |
প্রধান সেনাপতি | রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ |
সেনাপ্রধান | জেনারেল আজিজ আহমেদ |
প্রতীকসমূহ | |
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পতাকা | |
Aircraft flown | |
হেলিকপ্টার | ইউরোকপ্টার এএস৩৬৫ ডাউফিন, বেল-২০৬, এমআই-১৭১এসএইচ |
প্রশিক্ষণ বিমান | সেসনা-১৫২ |
পরিবহন বিমান | সেসনা-২৮০বি, কাসা সি-২৯৫ |
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইতিহাস
প্রারম্ভিক ইতিহাস
বাংলার সামরিক ইতিহাসের মূল রাজা-মহারাজাদের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সেসময় সেনাবাহিনীর প্রধানকে সেনাপতি বা মহাসেনাপতি নামে ডাকা হত। সেই সব সেনাবাহিনী গঠিত হত পদাতিক, অশ্বারোহী, যুদ্ধ হাতি আর যুদ্ধজাহাজ নিয়ে। বাংলায় মুসলমানদের আগমন আর বাংলা সুলতানাত এর প্রতিষ্ঠা সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছিল। সুলতানাতের একটি সুসজ্জিত ও সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী ছিল। মুঘল শাসনের সময় বাংলায় কামান ও গোলন্দাজ বাহিনীর প্রচলন হয়।[৩] ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় বাংলা ছিল দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে ব্রিটিশদের শক্তির প্রতীক। ১৭৫৭ সালে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ বাহিনী, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার নেতৃত্বাধীন ৫০০০০ সৈন্যের বাংলার সেনাবাহিনীকে পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত করে।পরবর্তীতে একই ব্রিটিশ বাহিনী ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে নবাব মীর কাসিমের নেতৃত্বাধীন বাংলার বাহিনীকে পরাজিত করে। ব্রিটিশরা বাংলায় আর্মি অফ বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করে যা পরবর্তীতে ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ হয়ে যায়। ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিম অংশ ছিল পুলিশ এবং সেনা সংগ্রহের জন্য অগ্রগণ্য অঞ্চল। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পূর্বে অশ্বারোহী বাহিনী এবং বল্লমধারী সৈন্যদলের সবাই ছিল এই অঞ্চলের।[৪][৫] বিদ্রোহের পর বেঙ্গল উপসর্গ-যুক্ত বিভিন্ন ইউনিটে, যেমন: বেঙ্গল স্যাপারস এবং বেঙ্গল ক্যাভালরি ইত্যাদি, বিহার, বানারসি, উত্তর প্রদেশ ইত্যাদি অবাঙ্গালি অঞ্চল থেকে নিয়োগ দেয়া হত কারণ এই অঞ্চলগুলো তখন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনে ছিল।[৩][৬] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলা থেকে সৈন্য সংগ্রহের জন্য বেঙ্গলি পল্টন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ সরকার বেঙ্গলি ডাবল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। এই সৈন্যদেরকে করাচিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হত আর পরে বাগদাদে মোতায়েন করা হত। যুদ্ধ শেষে এই সৈন্যরা বাগদাদে ১৯১৯ সালের কুর্দি বিদ্রোহ দমনে সাহায্য করে।[৭]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড পাইওনিয়ার কোর নামক একটি সহায়ক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে যারা ছিল কিছুটা প্রকৌশলী কিছুটা পদাতিক। এই বাহিনীর বেশিরভাগ সৈন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলা থেকে। এই বাহিনী মূলত রাস্তাঘাট, বিমানঘাঁটি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে মূল বাহিনীকে সাহায্য করত। তবে প্রয়োজনে তারা পদাতিক হিসেবে জাপানের সাথে যুদ্ধও করত। এই বাহিনীকে বিভিন্ন কোম্পানিতে সংগঠিত করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ক্যাপ্টেন গনি ছিলেন একজন কোম্পানি কমান্ডার এবং তিনি বার্মা ফ্রন্টে তার বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে পাইওনিয়ার কোরের সৈন্যরা ভারত ও জাপানের বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিল। ১৯৪৬ সালে, জালনায় অবস্থিত পাইওনিয়ার কোর সেন্টারের তৎকালিন অ্যাডজুট্যান্ট এবং কোয়ার্টারমাস্টার ক্যাপ্টেন গনি পূর্ব বাংলার যুদ্ধফেরত পাইওনিয়ার কোরের সৈন্যদের নিয়ে একটি পদাতিক রেজিমেন্ট তৈরির ধারনা দেন এবং কেন্দ্রীয় কমান্ডের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। পরবর্তীতে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামক নতুন দুই রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল স্যার ফ্রাংক মেজারভি এর অনুমতি পাওয়ার পর ক্যাপ্টেন গনি পূর্ববাংলার সৈন্যদের নিয়ে বাঙালি পল্টন গঠন করেন যা ছিল পরবর্তীতে গঠিত পদাতিক রেজিমেন্টের মূল ভিত্তি।[৩]
|
পাকিস্তান পর্ব
পাকিস্তান সৃষ্টির সময় ক্যাপ্টেন আব্দুল গনি পাকিস্তানের নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল মেজারভির অনুমতি নিয়ে পূর্ববাংলার যুবকদের নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠনের কাজ শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট বোম্বেতে পাইওনিয়ার কোরের সৈন্যদের বিদায় অনুষ্ঠানে ক্যাপ্টেন গনি বলেন "তোমরা পৃথিবীর কাছে প্রমাণ করে দেবে বাঙালি সৈন্যরা পৃথিবীর অন্যান্য জাতির মতই সক্ষম"।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এইসব উৎসাহব্যঞ্জক কথার সাথে ক্যাপ্টেন গনি ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুইটি পাইওনিয়ার কোম্পানি নিয়ে ঢাকায় ফিরে পিলখানায় (বর্তমান বিজিবি হেডকোয়ার্টার্স) অবস্থান নেন। পরবর্তীতে তিনি প্রশাসনের কাছে সৈন্যদের উপযুক্ত আবাসস্থল চান। তিনি রাজধানীর উত্তর দিকের কুর্মিটোলাকে সেনানিবাসের উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। দিনের পর দিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এখানে জংগল পরিষ্কার করে ব্যারাক, প্যারেড গ্রাউন্ড ইত্যাদি গড়ে তোলা হয়।[৩]
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পথিকৃৎ, ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর পতাকা উত্তোলন করা হয়। ক্যাপ্টেন গনি ছিলেন এই ব্যাটালিয়নের সবকিছুর প্রধান তবে প্রথম কমান্ডিং অফিসার ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভি জে ই প্যাটারসন।[৩] এবং অফিসার কমান্ডিং ছিলেন মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী প্রথম ব্যাটালিয়নের গঠনের পর দ্বিতীয় ব্যাটালিয়ন স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় এবং ক্যাপ্টেন গনি সৈন্য সংগ্রহ শুরু করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মোট ৮টি ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়।[৩]
১৯৭১: স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম
১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যার ফলস্বরূপ অসন্তোষ ছড়িয়ে পরে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পরে।[৮][৯] পাকিস্তানি বাহিনী এবং এর সহযোগী আধাসামরিক বাহিনী হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ হত্যা করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারিত হয়। মার্চ মাসেই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। পরবর্তীতে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সৈন্যরাও সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেয়। সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক জনগণ মিলে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। ১৭ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং কর্ণেল (অব:) মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে বাংলাদেশ বাহিনীর নেতৃত্বদানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ১১-১৭ জুলাই সেক্টর কমান্ডার্স কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই কনফারেন্সে লে: কর্ণেল আব্দুর রবকে চিফ অফ স্টাফ, গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ এবং মেজর এ আর চৌধুরীকে অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অফ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশ বাহিনী কমান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে বিভিন্ন সেক্টরের গঠন এবং বিন্যাস, সেক্টরের সমস্যা, বিভিন্ন কৌশলগত দিক এবং বাংলাদেশ বাহিনীর জনবল বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। এই কনফারেন্সে বাংলাদেশকে এগারটি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ দেয়া হয়।[৩][৮] সেক্টরের সকল কর্মকাণ্ড সেক্টর কমান্ডার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে কিছু সেক্টরকে একাধিক সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। ১০ নম্বর সেক্টর ছিল সরাসরি বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধানের অধীনস্ত এবং এই সেক্টরের জনবল ছিল প্রধানত নৌ কমান্ডোগণ।[৩]
কনফারেন্সের পর বাংলাদেশ বাহিনী একটি দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। পরবর্তীতে বাহিনীকে আবার পুনর্গঠন করা হয় এবং তিনটি ব্রিগেড আকারের সৈন্যদলে ভাগ করা হয়:[৩]
- কে ফোর্স, মেজর খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বাধীন, ৪, ৯ ও ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত।
- এস ফোর্স, মেজর কেএম শফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন, ২ ও ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত।
- জেড ফোর্স, মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন, ১, ৩ ও ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে গঠিত।
২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ বাহিনীর সামরিক সদস্যদের নিয়ে। প্রতিষ্ঠার পর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী প্রথাগত যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ৯ মাসব্যাপী চলা স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান ঘটে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়।
১৯৭১ পরবর্তী: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিকাশ
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান ফেরত কর্মকর্তা ও সৈন্যদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১০]
১৯৭২-৭৩ সালের মধ্যেই সেনাবাহিনীতে ইঞ্জিনিয়ার্স, সিগন্যাল, সার্ভিস, অর্ডন্যান্স, মিলিটারি পুলিশ, অশ্ব গবাদি পশুপালন ও খামার এবং মেডিক্যাল কোর গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা সেনানিবাস এ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম শর্ট কোর্সের পাসিং আউট প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) গঠিত হয়।
সেনাবাহিনীতে মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় রক্ষীবাহিনী সৃষ্টির মত ঘটনা গুলো নিয়ে তৎকালীন সেনাবাহিনীর সদস্য এবং সরকারের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।[১১] এই সমস্ত সন্দেহ-অবিশ্বাস এবং ভুল বোঝাবুঝি পেশাদার সেনা কর্মকর্তা এবং বিদ্যমান সরকারের মধ্যে নানা রকম মতবিরোধ সৃষ্টি করে যার ফলস্বরূপ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়।
অভ্যুত্থান, বিদ্রোহ এবং হত্যাকাণ্ড
১৫ অগাস্ট ১৯৭৫, কিছু চাকুরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা, বিশৃঙ্খল নিম্নপদস্থ সেনা কর্মকর্তা এবং এনসিও গোপন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ধানমন্ডিতে তার ব্যক্তিগত বাসভবনে হত্যা করে। রাষ্ট্রপতির দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় তাদের জীবন রক্ষা পায়। [১২] এদের মধ্যে দায়ী পাচ কর্মকর্তাকে ২০১০ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বাকিরা বর্তমানে দেশের বাইরে আত্মগোপনে রয়েছে।[১৩] হত্যাকান্ডের পর অভ্যুত্থানকারিদের সমর্থিত খন্দকার মোশতাক আহমেদ এর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা দখল করে। খন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন যা খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দান করে।[১৪]
তিনমাস পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং কর্ণেল শাফায়াত জামিল এর নেতৃত্বাধীন একদল উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা এবং এনসিও পালটা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খন্দকার মোশতাকের সরকারকে উৎখাত করেন। একই দিনে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকারি সেনাসদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করে। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহ-অন্তরীণ করে রাখা হয়।[১৫][১৬]
৭ নভেম্বর ১৯৭৫, লে: কর্ণেল আবু তাহের এর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নিয়ন্ত্রিত এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু খুবই সংগঠিত অভ্যুত্থান ঘটে ঢাকা সেনানিবাসে। এই অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ, এটিএম হায়দার সহ অনেক সেনা ও বিমানবাহিনী কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। কর্ণেল শাফায়ত জামিলকে জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হয়। কর্ণেল আবু তাহের মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহ-অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি দেন। জিয়াউর রহমান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি নেন এবং নিজেকে সেনাপ্রধান এবং ডেপুটি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তিনি কর্ণেল তাহেরকে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে ভূমিকার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেন।[১৭][১৮][১৯] পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। ৩০ মে ১৯৮১ চট্টগ্রামে এক সেনা বিদ্রোহে জিয়াউর রহমান নিহত হন।[২০]
এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এক নিরব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সংবিধান বিলুপ্ত করেন এবং দেশব্যাপী সেনা আইন জারি করেন। স্বৈরাচারী শাসন, দুর্নীতি এবং নির্বাচন জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত ক্ষমতা দখলে রাখেন।[২১] প্রচন্ড বিক্ষোভ এবং গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত
পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং এ অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতিদের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও এর সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনী এর সামরিক এবং রাজনৈতিক সংঘাত। ১৯৭৭ সালে শান্তি বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। ২০ বছর ধরে চলা এই সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।[২২]
বিদ্রোহ শুরু হলে বাংলাদেশ সরকার বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর একজন জেনারেলের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে অজনপ্রিয় হয়ে উঠে ও স্থানীয় আদি অধিবাসী ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অবিশ্বাস ও সক্রিয় বিরোধিতার সূত্রপাত ঘটায়। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার নির্মিত কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে ভূমি হারানো প্রায় এক লক্ষ উপজাতির পুনর্বাসন সহ আরও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে সরকার ব্যর্থ হয়। ভূমি হারানোদের কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি এবং ৪০০০০ হাজারের বেশি চাকমা নাগরিককে ভারতে চলেআশ্রয় নেয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি বসতি স্থাপন শুরু করে, ফলে আরো কিছু স্থানীয় উপজাতি বসতি উচ্ছেদ হয় এবং এ অঞ্চলের জনমিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। যেখানে ১৯৭৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ছিল মোট জনসংখ্যার ১১.৬ শতাংশ, ১৯৯১ সাল নাগাদ তা ৪৮.৫ শতাংশে দাঁড়ায়।[২২][২৩][২৪]
দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সরকারের সময় এ ব্যাপারে অগ্রগতি ছিল সীমিত।[২৫] ১৯৯৬ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শান্তি আলোচনা গতি পায়।[২৫] ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দশক ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটে।[২৬]
শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এ অঞ্চলে থাকা অধিকাংশ সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হয়। তবে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থায়ী সেনানিবাসে তিন ব্রিগেড সৈন্য স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং অবকাঠামো নির্মাণে সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে মূল ভুমিকা পালন করে।
পরবর্তী যুগ
১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানের পর জাতীয় রক্ষী বাহিনী বিলুপ্ত করে সকল জনবল সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ পাঁচটি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। পাঁচটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল পাঁচটি পদাতিক ডিভিশন। ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসাকালীন সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৭০,০০০। ১৯৮৫ সাল থেকে সেনাবাহিনী আরেকবার দ্রুত সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। ১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেনাবাহিনীর জনবল দাঁড়ায় ৯০,০০০ (অনেক পর্যবেক্ষকের মতে তা ৮০,০০০ এর কাছাকাছি ছিল) যা ১৯৭৫ সালের সংখ্যার তিনগুন।[২৭] এই সময়ে সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশন সংখ্যা সাতে উন্নীত করা হয়।
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিত্র বাহিনীর অধীন বহুজাতিক বাহিনীর অংশ হিসেবে অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম-এ অংশগ্রহণ করে। এটি ছিল জাতিসংঘ মিশনের বাইরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিদেশের মাটিতে প্রথম মোতায়েন। সেনাবাহিনী যুদ্ধ শেষে কুয়েতে থাকা মাইন পরিষ্কার করতে এক দল ইঞ্জিনিয়ার মোতায়েন করে। অপারেশন কুয়েত পুনর্গঠন (ওপিকে) এর আওতায় এই মোতায়েন সম্পন্ন হয়[২৮]
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গঠন কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সেনাবাহিনীর অনুরূপ। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণালী, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং এনসিও শিক্ষা ব্যবস্থা আত্বীকরনের মধ্য দিয়ে এই অবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রথমবারের মত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হয়। সেবছর সেনাবাহিনীকে ইরাকে এবং নামিবিয়ায় মোতায়েন করা হয়।[২৯] তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হু মু এরশাদের উদ্যোগে এই মোতায়েন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষে জাতিসংঘ মিশনের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি যান্ত্রিক-পদাতিক বহর প্রেরণ করে। সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২৫টি দেশে ৩০টি শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে।[২৯] এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইরিত্রিয়া, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মোজাম্বিক, যুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিওন, কসভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভোরি কোস্ট এবং ইথিওপিয়া।
এই সকল শান্তিরক্ষা মিশনে এখন পর্যন্ত ৮৮ জন বাংলাদেশি সেনাসদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।[২৯] শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদলের অবদান সর্বোচ্চ মানের প্রশংসিত। এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘ মিশনের উচ্চ পদগুলোতে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।[২৯] বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তিরক্ষা ও জাতি গঠন অপারেশন পরিচালনার মধ্য দিয়ে শান্তিরক্ষা অপারেশনে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) স্থাপন করেছে। এই প্রশিক্ষন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশন বিষয়ক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেখানে বলা হয়েছে- "যেকোন মোতায়েনের পূর্বে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রত্যেকটি দেশের দায়িত্ব"।
ফোর্সেস গোল ২০৩০
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ফোর্সেস গোল ২০৩০ নামক দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকায়ন পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বড় ধরনের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন কর্মকাণ্ড চলমান। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো বাহিনীকে উত্তর, দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় নামক তিনটি কোরে ভাগ করা হচ্ছে।[৩০] ইতিমধ্যে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন,[৩১] কক্সবাজারের রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন[৩২] ও বরিশাল-পটুয়াখালিতে ৭ পদাতিক ডিভিশন স্থাপন করা হয়েছে[৩৩] যা সেনাবাহিনীর মোট ডিভিশন সংখ্যাকে ১০ এ উন্নীত করেছে। সেনাবাহিনী পদাতিক সেনাদের আধুনিকায়নের জন্য ইনফ্যান্ট্রি সোলজার সিস্টেম নামক উচ্চাভিলাষী আধুনিকায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রত্যেক পদাতিক সৈন্যকে নাইট ভিশন গগলস, ব্যালিস্টিক হেলমেট, চোখ সুরক্ষা সরঞ্জাম, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি যোগাযোগের যন্ত্র, হাতে বহনযোগ্য জিপিএস যন্ত্র এবং কলিমেটর সাইট যুক্ত বিডি-০৮ রাইফেল দ্বারা সজ্জিত করা হচ্ছে।
বিশেষ অপারেশন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২ প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ব্যাটালিয়ন এবং পূর্বের ১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে দেশের একমাত্র প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড।[৩৪] বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২০১১ সালে চীন থেকে ৪৪টি এমবিটি-২০০০ ট্যাংক ক্রয় করেছে। এই ক্রয় ছিল দেশটির ইতিহাসের প্রথম বারের মত ট্যাংক ক্রয়।[৩৫] বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীগণ চীনের তৈরী টাইপ-৬৯ ট্যাংককে আপগ্রেড করে টাইপ-৬৯টুজি মানে উন্নত করেছে।[৩৬] বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভারি ওয়ার্কশপে ১৭৪টি টাইপ-৫৯ ট্যাংককে আপগ্রেড করে টাইপ-৫৯ বিডি দুর্জয় মানে উন্নীত করা হচ্ছে।[৩৭][৩৮] পদাতিক সৈন্যদের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ৩০০টি বিভিন্ন ধরনের আর্মারড যান যেমন: রাশিয়ার বিটিআর-৮০, তুরস্কের অটোকার কোবরা, সার্বিয়ার বিওভি এম১১ ইত্যাদি কেনা হয়েছে।[৩৬]
গোলন্দাজ বহরের আধুনিকায়নের জন্য সার্বিয়া থেকে ১৮ টি নোরা বি-৫২ ১৫৫মিমি স্বচালিত কামান কেনা হয়েছে। সক্ষমতা আরও বাড়াতে ৩৬টি ডব্লিউএস-২২ মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট সিস্টেম কেনা হয়েছে। ট্যাংক বিধ্বংসী সক্ষমতা বাড়াতে কেনা হয়েছে রাশিয়ান মেতিস এম-১ ট্যাংক বিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র এবং চীনা পিএফ-৯৮ ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র। আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতার উন্নয়নে কেনা হয়েছে দুই রেজিমেন্ট এফএম-৯০ স্বল্প পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।[৩৯] আর্মি এভিয়েশন এরও উন্নয়ন চলমান রয়েছে। ২০১২ সালে দুইটি ইউরোকপ্টার এএস৩৬৫ ডাউফিন হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়।[৪০] ২০১৬ সালে এই বাহিনীতে যুক্ত হয় ৬টি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার। ২০১৭ সালে একটি কাসা সি-২৯৫ পরিবহন বিমান সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়।[৪১][৪২] যুদ্ধক্ষেত্রে নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১৭ সালে স্লোভেনিয়া থেকে ৩৬টি ব্রামোর সি৪ আই মনুষ্যবিহীন আকাশযান যুক্ত হয় এই বাহিনীতে।
সংগঠন
প্রশাসনিক শাখা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিম্নলিখিত প্রশাসনিক কোরে বিভক্ত:
যুদ্ধ শাখা | যুদ্ধ সহায়ক শাখা | সেবা সংক্রান্ত শাখা |
---|---|---|
|
|
|
পদবিন্যাস
কমিশন্ড অফিসার
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি তে কমিশন প্রদান করা হয় এবং কমিশন পাওয়া অফিসারগন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।[৪৩][৪৪]
সমমানের ন্যাটো পদ | ওএফ-১০ | ওএফ-৯ | ওএফ-৮ | ওএফ-৭ | ওএফ-৬ | ওএফ-৫ | ওএফ-৪ | ওএফ-৩ | ওএফ-২ | ওএফ-১ | |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বাংলাদেশ | সমমানের পদ নেই | ||||||||||
জেনারেল | লেফটেন্যান্ট জেনারেল | মেজর জেনারেল | ব্রিগেডিয়ার জেনারেল | কর্ণেল | লেফটেন্যান্ট কর্ণেল | মেজর | ক্যাপ্টেন | লেফটেন্যান্ট | সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট |
জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও)
সমমানের ন্যাটো পদ | ডব্লিউও-৫ | ডব্লিউও-৪ | ডব্লিউও-৩ | ডব্লিউও-২ | ডব্লিউও-১ |
---|---|---|---|---|---|
বাংলাদেশ | |||||
অনারারি ক্যাপ্টেন | অনারারি লেফটেন্যান্ট | মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার | সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার | ওয়ারেন্ট অফিসার |
নন-কমিশন্ড অফিসার (এনসিও) এবং সৈনিক
সার্জেন্ট দ্বিতীয় শ্রেণি (নন-গেজেটেড) এবং কর্পোরাল, ল্যান্স কর্পোরাল ও সৈনিক তৃতীয় শ্রেণীর পদবী। এছাড়া কোম্পানি, ব্যাটারি, পদাতিক ব্যাটালিয়ন, গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ইত্যাদির গুরুত্বপূর্ণ নিয়োজিত নিয়োগ গুলোও পদবী হিসেবে বিবেচিত। যেমন: কোম্পানি কোয়ার্টার মাস্টার সার্জেন্ট (সিকিউএমএস), রেজিমেন্টাল সার্জেন্ট মেজর(আরএসএম) ইত্যাদি সার্জেন্টদের দখলে থাকে। যদিও এগুলো আলাদা কোন পদ নয় তারপরেও তাদের আলাদা পদচিহ্ন রয়েছে।[৪৩]
সেনানিবাসের তালিকা
- আলিকদম সেনানিবাস, বান্দরবান
- বান্দরবান সেনানিবাস
- চট্টগ্রাম সেনানিবাস
- কুমিল্লা সেনানিবাস, কুমিল্লা
- ঢাকা সেনানিবাস
- দীঘিনালা সেনানিবাস, খাগড়াছড়ি
- হালিশহর সেনানিবাস, ছত্তগ্রাম
- জাহানাবাদ সেনানিবাস, খুলনা
- জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাস, বগুড়া
- জালালাবাদ সেনানিবাস, সিলেট
- যমুনা সেনানিবাস, টাঙ্গাইল
- যশোর সেনানিবাস
- কাপ্তাই সেনানিবাস, রাঙামাটি
- খাগড়াছড়ি সেনানিবাস
- খোলাহাটি সেনানিবাস, দিনাজপুর
- মাঝিড়া সেনানিবাস, বগুড়া
- মিরপুর সেনানিবাস
- ময়মনসিংহ সেনানিবাস
- পদ্মা সেনানিবাস, মাদারীপুর
- পোস্তগোলা সেনানিবাস
- কাদিরাবাদ সেনানিবাস, নাটোর
- রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস, গাজীপুর
- রাজশাহী সেনানিবাস
- রামু সেনানিবাস, কক্সবাজার
- রাঙ্গামাটি সেনানিবাস
- রংপুর সেনানিবাস
- লালমনিরহাট সেনানিবাস
- সৈয়দপুর সেনানিবাস, নীলফামারী
- সাভার সেনানিবাস
- শহীদ সালাহউদ্দীন সেনানিবাস, ঘাটাইল
- শেখ হাসিনা সেনানিবাস, লেবুখালী পটুয়াখালী
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ
- বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ), ভাটিয়ারি, চট্টগ্রাম
- স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিকস (এসআই&টি), জালালাবাদ সেনানিবাস , সিলেট.
- ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসি&এসসি), মিরপুর সেনানিবাস, ঢাকা।.
- ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিরপুর সেনানিবাস ঢাকা
- মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি (এমআআইএসটি), মিরপুর সেনানিবাস, ঢাকা
- আর্মাড কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুল (এসিসি&এস), জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাস, বগুড়া
- ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অফ মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, কাদিরাবাদ সেনানিবাস, নাটোর
- সিগনাল ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, যশোর সেনানিবাস, যশোর
- আর্মি সার্ভিস কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, জাহানাবাদ সেনানিবাস, খুলনা
- আর্মি মেডিকাল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস, ঘাটাইল, টাংগাইল
- অর্ডন্যান্স কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস, গাজীপুর
- বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট), রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস, গাজীপুর
- ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, সৈয়দপুর সেনানিবাস, নীলফামারী
- কোর অফ মিলিটারি পুলিশ সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস, ঘাটাইল, টাংগাইল
- আর্মি স্কুল অফ এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস, ঘাটাইল, টাংগাইল
- আর্মি স্কুল অফ ফিজিক্যাল ট্রেনিং অ্যান্ড স্পোর্টস (এএসপিটিএস), ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা
- আর্মি স্কুল অফ মিউজিক, চট্টগ্রাম সেনানিবাস, চট্টগ্রাম
- আর্মড ফোর্সেস মেডিকাল কলেজ (এএফএমসি), ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা
- আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, হালিশহর, চট্টগ্রাম
- স্কুল অফ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, ময়নামতি সেনানিবাস, কুমিল্লা
- ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার, চট্টগ্রাম সেনানিবাস, চট্টগ্রাম
- বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার, রাজশাহী সেনানিবাস, রাজশাহীপ
- নন-কমিশন্ড অফিসারস একাডেমী, মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়া
- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি), মিরপুর সেনানিবাস, ঢাকা
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা
No comments:
Post a Comment